এদিকে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলোও প্লাবিত হয়ে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে করে রোপায়িত আউশ ও বীজতলাসহ কৃষকের প্রায় সহস্রাধিক হেক্টর ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পরেছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে।
কানাইঘাট প্রতিনিধি জানান, কানাইঘাটে ফের বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে। এতে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষ সহ সুরমা পাড়ের লোকজন আবারো বন্যা আতংকে দিন পার করছেন। গতকাল মঙ্গলবার টানা ২৪ ঘন্টার বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৭০ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। যার কারনে নদীর তীরবর্তী চর গুলো বন্যার পানিতে পুর্ণরায় ডুবে যাচ্ছে। এতে করে উপজেলার বেশ কয়েকটি সুরমা ডাইক পূর্বের বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়ায় ভাঙ্গন কবলিত এলাকার কয়েক হাজার মানুষের মাঝে নতুন করে বন্যা আতংক দেখা দিয়েছে। উপজেলার দিঘীরপাড় ইউপির দর্পনগর, সাতবাঁেকর চরিপাড়া, লক্ষীপ্রসাদের গৌরিপুর, সদর ইউপির উমাগর, পৌরসভার ডালাইচর ও রাজাগঞ্জ ইউপি সহ বিভিন্ন স্থানে সুরমা ডাইক গত জুনের বন্যায় ভেঙ্গে যায়। যার কারনে উপজেলার মানুষ চরম বন্যা আতংকে দিন পার করছেন। কারন ইতি মধ্যে উপজেলার অনেক মাঠে ভাদ্র মাসের ইরি ধানের চারা রোপন করা হয়েছে। উপজেলার মানুষের ধারনা যে ভাবে মুষলধারে টানা বৃষ্টি ও উজানে ভারতের মেঘালয়ের পানি সুরমা নদীতে জোয়ার সৃষ্টি করছে তাতে পুর্ণরায় এ উপজেলায় বন্যা দেখা দিতে পারে। এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কেবলই বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সুরমার বিভিন্ন ভাঙ্গা ডাইক দিয়ে ধীরে ধীরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে ।
গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি জানান, গেল কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে করে রোপায়িত আউশ ও বীজতলাসহ কৃষকের প্রায় সহস্রাধিক হেক্টর ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পরেছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে।
পাহাড়ি ঢলে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে সারী-গোয়াইনঘাট ও সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বসত বাড়িতে পানি উঠায় পানিবন্দি হয়ে অনেকে গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন। বসত বাড়ির পাশাপাশি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকের পুকুরে পাড় ডুবে মাছ ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ দিকে পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার জাফলং ও বিছনাকান্দি এ দু’টি পাথর কোয়ারির পাথর উত্তোলন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে পাথর কোয়ারি সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টানা কয়কে দিনের বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা সারী এবং পিয়ান নদী দিয়ে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সোমবার থেকে গোয়াইনঘাটের নিম্নাঞ্চলগুলোতে বন্যার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের আসাম পাড়া, আসাম পাড়া হাওর, ছৈলাখেল নবম খন্ড, সানকী ভাঙ্গা, নয়াগাঙের পার, বাউরবাগ হাওর, ভিত্রিখেল হাওর, আলীরগাঁও ইউনিয়নের নাইন্দার হাওর, তিতকুল্লি হাওর, বুধিগাঁও হাওর, রাজবাড়ি কান্দিসহ পশ্চিম জাফলং, রুস্তমপুর, ডৌবাড়ী, লেঙ্গুগুড়া, তোয়াকুল ও নন্দীরগাঁও ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর প্লাবিত হয়ে পরে। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়া অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার হেক্টর আউশ ধান ও বীজতলা নিমজ্জিত হওয়ার খবর পেয়েছি। তবে
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে এর পরিমান আরও বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আর যদি দ্রুত বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয় তাহলে ফসলের তেমন ক্ষতি হবেনা বলে জানান তিনি।
ইউএনও বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক দিক মনিটরিং করা হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকা পর্যায়ক্রমে পরিদর্শন করে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকার ক্ষয়-ক্ষতির বিবরণ তুলে ধরে প্রয়োজনীয় আরও ত্রাণ সামগ্রীর জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।
গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী জানান, বন্যা কবলিত এলকা পরিদর্শন করে সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন বন্যার্তদের জন্য যে পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খবই অপ্রতুল। প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রীর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে।